🔔 সর্বশেষ:
লোড হচ্ছে...

যাদের উসকানিতে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

সারাদেশে আওয়ামীলীগ এর ঝটিকা মিছিল 


 গণ-অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের স্বৈরশাসকের অবসান ঘটে। হাজারো শহিদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে ফের বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ফিরে আসার জানান দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এমনকি এখন তারা দেশের মধ্যে সংগঠিত হতে শুরু করেছে।


মাঝে মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করছেন তারা। প্রকাশ্যে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিতে গোপনে জড়ো হচ্ছে। একই সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত বক্তৃতা-বিবৃতি দেওয়া অব্যাহত আছে। শুরুর দিকে আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা সংখ্যায় কম থাকলেও, ক্রমেই তা বড় হচ্ছে।

এদিকে ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায় আওয়ামী লীগের এই সক্রিয় হওয়া এবং ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে রাজপথে প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করা নিয়ে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারা তাদের নেপথ্যে থেকে মদদ দিচ্ছে এবং কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে নামছেন। সন্দেহের তির পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন ছাড়াও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দিকে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসনের মধ্য থেকে সবুজ সংকেত না থাকলে এত বড় গণহত্যার পর দলটির মাঠে নামার কথা নয়। বিশেষ করে প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী দোসররা কৌশলে সমর্থন ও উসকানি দিচ্ছে।
এ ছাড়া কেউ কেউ মনে করেন, রাজনীতিতে তৃতীয় বিকল্প শক্তি ঠেকাতে যারা ইনক্লুসিভ নির্বাচন করার শর্ত দেওয়া ছাড়াও নানাভাবে বয়ান তৈরি করছে তাদের পর্দার আড়ালে সমর্থন দিচ্ছে রাজনৈতিক দলের কেউ কেউ। এমনকি আওয়ামী লীগকে সংসদে বিরোধী দল বানানোর গভীর চক্রান্তও চলছে। তারা মনে করেন, পর্দার আড়ালে দেশি-বিদেশি চক্রের এমন ষড়যন্ত্রের রোডম্যাপ সফল হলে ভবিষ্যতে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারও ‘রাজনৈতিক মামলার’ খাদে আটকা পড়তে পারে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সময় থাকতে সতর্ক না হলে এবং দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা না হলে ক্ষমতাচ্যুত এই দলটির নেতাকর্মীদের এ ধরনের অপতৎপরতা বাড়তেই থাকবে। ফলে নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা হলে আওয়ামী লীগ পুরোনো চেহারায় ফিরে আসবে। ফের অশান্ত হবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। পরবর্তী সময়ে যার খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে। নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ক্ষমতায় এলেও ৩ বছরের মধ্যে দল বা ভবিষ্যৎ জাতীয় সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে আওয়ামী লীগ একের পর এক ষড়যন্ত্র কার্ড খেলবে। আওয়ামী লীগকে মাঠে নামানোর পেছনে দেশি-বিদেশি চক্র মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি ও সরকারে পুনর্বাসন করতে কতগুলো বিকল্প প্ল্যান নিয়েও তারা ব্যস্ত সময় পার করছে। যারা কাজে লাগাচ্ছে প্রতিটি মুহূর্ত।
আওয়ামী লীগের এভাবে ফের সরব হওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে লেখা এক পোস্টে বলেন, ‘যেদিন থেকে আমাদের আওয়ামীবিরোধী অবস্থান এবং কম্প্রোমাইজের রাজনীতির বিরোধিতাকে ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলা শুরু হয়েছে, সেদিন থেকেই আওয়ামী লীগের মিছিল বড় হতে শুরু করেছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘যারা কম্প্রোমাইজের রাজনীতি করছেন, তাদের সতর্ক করছি-অতি শিগগিরই আওয়ামী লীগ নিয়ে সিদ্ধান্তে আসুন। না হলে আপনারা করবেন কম্প্রোমাইজের রাজনীতি, আর আমি করব শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ। আমি শিষ্টাচারবহির্ভূত আচরণ শুরু করলে নিতে পারবেন না। সাবধান হয়ে যান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকেই বলছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পুরোমাত্রায় আওয়ামী লীগের পাশে আছে। দলটির নেতাকর্মীদের নানাভাবে সাহস এবং শক্তি জোগাচ্ছে দেশটি। এর বাইরে দেশি-বিদেশি শক্তির অনেকেই গোপনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক ধরনের সখ্য গড়ে তুলেছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে তাদের পেছনে বিপুল পরিমাণ কালোটাকাসহ আর্থিক বিনিয়োগ করা হচ্ছে বিদেশের মাটি থেকে। আর এসব কারণেই নতুন করে রাজনীতির মাঠে ফেরার সাহস ও সুযোগ পাচ্ছে বিতাড়িত এই দলটি। সংশ্লিষ্টদের মতে, ছত্রিশে জুলাইয়ে অংশ নেওয়া আন্দোলনের শক্তিগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যে আওয়ামী এজেন্টরা সফল হয়েছে। এর বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বড় দলগুলোর সঙ্গে আপসরফা করেও সক্রিয় হতে শুরু করেছে ক্ষমতাচ্যুত এই দলটি। ফ্যাসিস্ট দলটির মিছিল বড় হওয়ার পেছনে এ দুটি বিষয় বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী দুঃশাসনের। প্রাণভয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে তার দীর্ঘদিনের বন্ধু দেশ ভারতে আশ্রয় নেন। এর ঠিক আগে-পরে নানা উপায়ে দেশ ছাড়েন ওই সরকারের বেশির ভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, সংসদ-সদস্যসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা। আর যারা পালাতে পারেননি, তারা দেশের মধ্যে আত্মগোপনে চলে যান। কেউ কেউ গ্রেফতার হন। শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর দেশের মানুষের পক্ষ থেকে অভিন্ন দাবি ওঠে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সব অপকর্মের মূলহোতা, দলটির ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। এর রেশ ধরে ওই বছরেরই ২৩ অক্টোবর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়টি রহস্যজনক কারণে এখনো ঝুলে আছে।
গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে অন্তত চার জায়গায় ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরায় আবার ঝটিকা মিছিল করে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তরের উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান মিলনের নেতৃত্বে এই মিছিল করা হয়। মিছিলে অংশ নেন আওয়ামী লীগসহ তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
Previous Post Next Post

نموذج الاتصال