🔔 সর্বশেষ:
লোড হচ্ছে...

বাংলাদেশে অনুমোদন পেল স্টারলিংক

 

বাংলাদেশে অনুমোদন পেল স্টার লিংক
স্টার লিংক 

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংককে নন-জিওস্টেশনারি অরবিট বা এনজিএসও লাইসেন্স প্রদান করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মার্কিন এই প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক প্রেরিত সুপারিশে আজ সোমবার অনুমোদন দিয়েছেন তিনি। 

গত ২৫ মার্চ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ‘নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক লাইসেন্সিং গাইডলাইন জারি করে। উক্ত গাইডলাইনের আওতায় স্টারলিংক সার্ভিসেস বাংলাদেশে নামের প্রতিষ্ঠানটি এনজিওএস লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য প্রযোজ্য ফি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বিটিআরসি বরাবর আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে লাইসেন্স ইস্যুর জন্য গত ২১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ২৯৪তম কমিশন সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। 
এনজিএসও লাইসেন্স প্রাপ্তির পর স্টারলিংক এবার বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা প্রদান শুরু করতে পারবে। উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৯ মার্চ মার্কিন এই প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের বাজারে ব্যবসা করার অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। 

স্টারলিংক বাংলাদেশের ইন্টারনেটে নতুন সংযোজন। শ্রীলংকার পরে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে স্টারলিংক।

এ প্রসঙ্গে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের উপর্যুপরি ইন্টারনেট বন্ধের প্রতিবাদে স্টারলিংককে বাংলাদেশের নিয়ে আসা একটা গণদাবীতে পরিণত হয়েছিল। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বিনিয়োগ বান্ধব হিসেবে একটা বার্তা পৌঁছে দেয়ার ইচ্ছা ছিল প্রধান উপদেষ্টার।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের হাওর বাওড় দ্বীপাঞ্চলে, দুর্গম পার্বত্য এলাকায়, বিশেষভাবে উপকূলীয় দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্পন্ন ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেসব অঞ্চলে এখনো ফাইবার পৌঁছেনি সেখানে দ্রুততম সময়ে মানসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টা স্বউদ্যোগী হয়ে স্পেইসএক্স সিইও ইলন মাস্ককে ফোন করে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংককে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার আহ্বান জানান। এ লক্ষ্য অর্জনে বিডা, বিটিআরসি, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নিবিড়ভাবে কাজ করেছে।’ 
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, স্টারলিংকের সেবাগুলো মধ্যে একটি প্রাথমিক সেবা হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট, যেখানে লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাবে না, যেটা আইএসপির ক্ষেত্রে হয়। অনেক ক্ষেত্রে যদি লম্বা সময় ধরে লোডশেডিং থাকে, মোবাইল টাওয়ারের ব্যাটারির ব্যাকআপ ফুরিয়ে গেলে মোবাইল ইন্টারনেটেও বিঘ্ন ঘটে। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হবে না। 
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে ফাইবার নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি সীমিত। উপরন্তু এই ফাইবার নেটওয়ার্কের উল্লেখযোগ্য অংশ টেলকো গ্রেডের নয়। বাংলাদেশের অন্তত ৬৫ শতাংশ টেলিযোগাযোগ টাওয়ার এখনো ফাইবারাইজেশনের বাইরে, সেখানে মাইক্রোওয়েভ দিয়ে সেবা দেওয়া হয়, খুবই সীমিত ধারণক্ষমতা। আবার আমাদের মোবাইল নেটওয়ার্কের যে কাভারেজ ও ক্যাপাসিটি আছে, তাতেও সমস্যা আছে, হাইওয়ে মোবিলিটি কভারেজের সমস্যা আছে। স্টারলিংক এসব সমস্যার সমাধান করবে।’ 
তিনি জানান, স্টারলিংক বাংলাদেশের মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বাজারকে প্রতিযোগিতামূলক করবে। এর মাধ্যমে ভয়েস কল এবং ডেটা বান্ডেল ভিত্তিক গতানুগতিক ইন্টারনেট সেবাদান ব্যবস্থা ডিজিটাল সার্ভিস কেন্দ্রিক নতুন রূপান্তরে মধ্য দিয়ে যাবে। স্টার্লিংকের সার্ভিসের ফলে কমিউনিকেশন ইন্ডাস্ট্রিতে ডিরেগুলেশনের সূচনা হবে, প্রতিযোগিতা বাড়বে, শহর কিংবা গ্রামভেদে নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্পন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রাপ্তির নিশ্চয়তা তৈরি হবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রযুক্তি পরীক্ষা প্রথম চালানো হয় ২০২৩ সালের জুলাই মাসে। এরপর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্কের মধ্যে ভিডিও কলে বাংলাদেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর বিষয়ে আলোচনা হয়। তাঁদের মধ্যকার আলোচনার প্রেক্ষিতে গত ২৫ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের ইন্টারনেট পরিষেবা চালুর নির্দেশ দেন। 

এ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক সম্প্রচারের ক্ষেত্রে স্টারলিংক তাঁদের বিদেশি স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে ব্যবহার করলেও বাংলাদেশে বাণিজ্যিক সেবা প্রদানে প্রতিষ্ঠানটি দেশের এনজিএসও নীতিমালা অনুযায়ী স্থানীয় ব্রডব্যান্ড গেটওয়ে (আইআইজি) ব্যবহার করবে। 

বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের মালিকানাধীন মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে স্টারলিংক। বিশ্বজুড়ে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে তাঁরা। বর্তমানে বিশ্বের ৭০টিরও বেশি দেশে ৪৬ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করছেন স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। উল্লেখ্য, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ৭, ১৩৫টি স্যাটেলাইট রয়েছে স্টারলিংকের এবং এই স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

Previous Post Next Post

نموذج الاتصال